রাষ্ট্রের সাথে ধর্মের মেলবন্ধন মানা যাবে না: রুমিন ফারহানা
- By Jamini Roy --
- 09 October, 2024
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা নতুন প্রজন্মের কাছে ধর্ম এবং রাষ্ট্রকে আলাদা রাখার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। মঙ্গলবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের গ্যালারি কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘সংবিধান: ক্ষমতার না জনতার’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “ধর্মকে ধর্মের জায়গায় এবং রাষ্ট্রকে রাষ্ট্রের জায়গায় রাখতে হবে। রাষ্ট্রের সাথে ধর্ম এবং ধর্মের সাথে রাষ্ট্রকে মেলানোর প্রয়োজন নেই।”
রুমিন ফারহানা বলেন, বাংলাদেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণা করা হলেও সংবিধানের ৮ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা চারটি মূলনীতির মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদ রয়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে রেখে কিভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্রের মূলনীতি হতে পারে?”
তিনি আরও মন্তব্য করেন, “আমরা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে চিন্তিত। যদি বিচার বিভাগ স্বাধীন না থাকে, তাহলে রাষ্ট্রের কার্যক্রম অকার্যকর হয়ে পড়ে।” তিনি রাষ্ট্রপতির কার্যকারিতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন, “রাষ্ট্রপতি কার্যত কোনো ক্ষমতা রাখেন না, তাকে সবকিছু প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে করতে হয়।”
রুমিন ফারহানা সংসদে ‘হ্যাঁ’ ভোটের জয়জয়কারের বিষয়টিও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “সংসদে সবসময় দেখা যায় ‘হ্যাঁ’ ভোট জয়যুক্ত হয়েছে, কিন্তু আমরা কি কখনও ‘না’ ভোটের জয়জয়কার শুনেছি? কারণ, যদি ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ‘না’ ভোট দেন, তাহলে তার সাংসদ পদও যায়।” তিনি উল্লেখ করেন, “এ ধরনের সমস্যার পরিবর্তনের সময় এসেছে। এজন্য সকলের কথা বলার প্রয়োজন।”
রুমিন ফারহানা বর্তমান সংবিধানের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “বর্তমানে দেশে কি কোনো সংবিধান আছে? যদি না থাকে, তাহলে অন্তর্বর্তী সরকার এই সংবিধানের অধীনে শপথ নিচ্ছে কীভাবে?” তিনি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেন, “শেখ হাসিনা এখনও প্রধানমন্ত্রী। সংবিধানের ৫৭(৩) অনুযায়ী, নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রী তার পদে বহাল থাকবেন।”
বক্তব্যের শেষে রুমিন ফারহানা নতুন প্রজন্মের প্রতি বিশেষভাবে আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আপনারা ধর্মকে ধর্মের জায়গায় এবং রাষ্ট্রকে রাষ্ট্রের জায়গায় রাখবেন। রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্ম, রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে কখনোই মেলাবেন না।”
তিনি সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতিষ্ঠা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং বলেন, “সংবিধানের ৮ নম্বর অনুচ্ছেদে সমাজতন্ত্রের কথা বলা হলেও, আমরা সমাজতন্ত্রের ধারণা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছি।”
এই আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম। এছাড়া, সাধারণ শিক্ষার্থীরা, সাংবাদিক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনার মধ্য দিয়ে বক্তারা দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক সুরক্ষার বিষয়ে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং দেশের জন্য একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।